সবুজ মটরশুটি শুধু সুস্বাদুই নয়, এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি ফাইবার, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। এই নিবন্ধে আমরা সবুজ মটরশুটির উপকারিতা, পুষ্টিগুণ এবং কিছু সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
সবুজ মটরশুটি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার। এটি ওজন নিয়ন্ত্রণ, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ, হৃদরোগ প্রতিরোধ এবং হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে সহায়ক। যদিও এটি কিছু অ্যান্টিনিউট্রিয়েন্টস ধারণ করে, তবে সঠিকভাবে রান্না করলে এর নেতিবাচক প্রভাব কমানো সম্ভব। তাই, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের অংশ হিসেবে সবুজ মটরশুটি আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন।
সবুজ মটরশুটি কী?
সবুজ মটরশুটি, যাকে "গার্ডেন পি" (Garden Peas) বলা হয়, এটি Pisum sativum উদ্ভিদ থেকে আসে। এটি মূলত একটি লিগিউম (legume), তবে সাধারণত শাকসবজি হিসেবে পরিচিত। এটি টাটকা, হিমায়িত বা ক্যানজাত অবস্থায় পাওয়া যায় এবং বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহৃত হয়।সবুজ মটরশুটির পুষ্টিগুণ
সবুজ মটরশুটি কম ক্যালোরিযুক্ত কিন্তু উচ্চমাত্রায় পুষ্টিকর উপাদানে সমৃদ্ধ। ৮০ গ্রাম (প্রায় আধা কাপ) রান্না করা সবুজ মটরশুটিতে থাকে:- ক্যালোরি: ৬৭
- কার্বোহাইড্রেট: ১২.৫ গ্রাম
- ফাইবার: ৪.৪ গ্রাম
- প্রোটিন: ৪.৩ গ্রাম
- ভিটামিন এ: দৈনিক চাহিদার ৩.৬%
- ভিটামিন কে: দৈনিক চাহিদার ১৭%
- ভিটামিন সি: দৈনিক চাহিদার ১২.৬%
- থায়ামিন: দৈনিক চাহিদার ১৭%
- ফোলেট: দৈনিক চাহিদার ১২.৬%
- ম্যাঙ্গানিজ: দৈনিক চাহিদার ১৮%
- আয়রন: দৈনিক চাহিদার ৬.৮%
- ফসফরাস: দৈনিক চাহিদার ৭.৫%
সবুজ মটরশুটির উপকারিতা
১. উচ্চমাত্রার প্রোটিন সমৃদ্ধ
সবুজ মটরশুটি উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের অন্যতম উৎকৃষ্ট উৎস। এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।২. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
সবুজ মটরশুটি কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত এবং এতে থাকা ফাইবার ও প্রোটিন রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।৩. হজমের জন্য ভালো
সবুজ মটরশুটিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে সহায়তা করে।৪. হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে
এর উচ্চমাত্রার ফাইবার, পটাশিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতেও সহায়ক।৫. ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে
সবুজ মটরশুটিতে স্যাপোনিন নামক যৌগ থাকে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর হতে পারে।সবুজ মটরশুটির কিছু সম্ভাব্য নেতিবাচক দিক
১. অ্যান্টিনিউট্রিয়েন্টসের উপস্থিতি
এতে কিছু অ্যান্টিনিউট্রিয়েন্টস যেমন ফাইটিক অ্যাসিড ও লেকটিন থাকে, যা খনিজ শোষণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তবে রান্না বা ভিজিয়ে রাখার মাধ্যমে এটি কমানো যায়।২. গ্যাস ও ফোলাভাবের সমস্যা
এতে থাকা ফডম্যাপস (FODMAPs) কিছু মানুষের জন্য গ্যাস বা ফোলাভাব সৃষ্টি করতে পারে। যদি এটি সমস্যা সৃষ্টি করে তবে অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত।সবুজ মটরশুটি খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার উপায়
- সবজি হিসেবে ভাত বা রুটির সঙ্গে খেতে পারেন।
- সালাদ, স্যুপ বা স্ট্যুতে যোগ করতে পারেন।
- মটরশুটির পিউরি বা হুমাস তৈরি করে খেতে পারেন।
সবুজ মটরশুটি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার। এটি ওজন নিয়ন্ত্রণ, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ, হৃদরোগ প্রতিরোধ এবং হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে সহায়ক। যদিও এটি কিছু অ্যান্টিনিউট্রিয়েন্টস ধারণ করে, তবে সঠিকভাবে রান্না করলে এর নেতিবাচক প্রভাব কমানো সম্ভব। তাই, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের অংশ হিসেবে সবুজ মটরশুটি আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন।