স্বাস্থ্য—এই শব্দটির সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। এটি আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছি, আমরা কি সত্যিই স্বাস্থ্য সচেতন? না কি শুধুমাত্র মুখে মুখে স্বাস্থ্য সচেতনতার কথা বলি? স্বাস্থ্য আমাদের জীবনের এমন একটি দিক, যা যত বড় পরিসরে থাকবে, ততই আমাদের জীবন সহজ হয়ে উঠবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ১৯৮৪ সালে স্বাস্থ্যকে সংজ্ঞায়িত করে বলেছিল-
"স্বাস্থ্য হলো শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সুস্থতার একটি সম্পূর্ণ অনুভূতি। এটি শুধুমাত্র রোগ বা দুর্বলতার অনুপস্থিতি নয়।"

পরে ১৯৮৬ সালে WHO এই সংজ্ঞা পরিবর্তন করে বলেছিল-
"স্বাস্থ্য হলো প্রতিদিনের জীবনের একটি সম্পদ, এটি শুধুমাত্র বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য নয়। এটি সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনে ইতিবাচকতা নিয়ে আসে এবং শারীরিক শক্তি অর্জনের অনুপ্রেরণা যোগায়।"

সুতরাং, একজন ব্যক্তি কতটা সুস্থ, তার উপর নির্ভর করে সে সমাজে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। একজন অসুস্থ ব্যক্তির কাছে যত অর্থই থাকুক না কেন, সমাজে তার গুরুত্ব কমে যায়। এজন্যই স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।

স্বাস্থ্য কত প্রকার ও কী কী?​

সাধারণত, স্বাস্থ্যকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়:

১. শারীরিক স্বাস্থ্য
২. মানসিক স্বাস্থ্য

তবে, স্বাস্থ্য শুধু শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উপর নির্ভর করে না। এতে আত্মিক সুস্থতা, আর্থিক স্বচ্ছলতা, আবেগ নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক স্থিতিশীলতা ইত্যাদিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

শারীরিক স্বাস্থ্য​

শারীরিক স্বাস্থ্য বলতে শরীরের প্রতিটি অঙ্গের সঠিক কার্যক্ষমতাকে বোঝায়। একজন মানুষকে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ থাকতে হলে তার শারীরিক সুস্থতা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শারীরিক সুস্থতার নিয়ম​

শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়:
  • পরিমিত ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ
  • নিয়মিত ব্যায়াম করা
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা
  • পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা

মানসিক স্বাস্থ্য​

মানসিক স্বাস্থ্য হলো একজন ব্যক্তির আবেগ, মন ও সামাজিক স্থিতিশীলতার সামগ্রিক অবস্থা। মানসিকভাবে সুস্থ না থাকলে শারীরিক সুস্থতাও বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।

মানসিক সুস্থতার উপায়​

  • মানসিক চাপ কমানো
  • হাসিখুশি থাকা
  • ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করা
  • ধ্যান ও যোগব্যায়াম করা
  • ভালো বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো

ভালো স্বাস্থ্য বজায় রাখার নিয়ম​

ভালো স্বাস্থ্য ধরে রাখার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম রয়েছে। এসব নিয়ম মেনে চললে দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ থাকা সম্ভব।

১. সঠিক খাবার বেছে নিন​

  • ফ্যাট বা চর্বিযুক্ত খাবার কম খান
  • বেশি পরিমাণে শাকসবজি ও ফলমূল খান
  • আঁশযুক্ত খাবার খান
  • দুগ্ধজাত খাদ্য রাখুন

২. ক্ষতিকর খাবার পরিহার করুন​

  • ফাস্টফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন
  • অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার কম খান
  • রঙ মিশ্রিত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন

৩. সময়মতো খাবার খান​

  • প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খান
  • অতিরিক্ত খাবার একসঙ্গে খাবেন না
  • বেশি সময় না খেয়ে থাকলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে

৪. পর্যাপ্ত পানি পান করুন​

  • প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন
  • শরীর হাইড্রেটেড রাখুন
  • কম পানি পান করলে কিডনির সমস্যা হতে পারে

৫. ধূমপান ও মাদক পরিহার করুন​

  • ধূমপান ফুসফুসের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর
  • এটি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়
  • একবারে ছাড়তে না পারলে ধাপে ধাপে কমিয়ে আনুন

৬. প্রতিদিন ব্যায়াম করুন​

  • ব্যায়াম করলে শরীর সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকে
  • নিয়মিত হাঁটাহাটি করুন
  • যোগব্যায়াম ও মেডিটেশন করুন

৭. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন​

  • প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান
  • কাজের ফাঁকে একটু বিশ্রাম নিন
  • পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে

উপসংহার​

স্বাস্থ্য হলো সম্পদের চেয়েও মূল্যবান। আমরা যদি এখনই সচেতন না হই, ভবিষ্যতে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হতে হতে পারি। তাই, আমাদের উচিত প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার চর্চা করা। স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, মানসিক প্রশান্তি ও পরিমিত বিশ্রাম আমাদের দীর্ঘায়ু ও সুস্থ জীবনযাপনে সহায়তা করবে। মনে রাখবেন, "Health is wealth"—স্বাস্থ্যই প্রকৃত সম্পদ!
 

About us

  • BanglaForums.com একটি বাংলা অনলাইন কমিউনিটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে ব্যক্তিরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে পারে, ধারণা ভাগ করে নিতে পারে এবং বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য ও প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে পারে।

Quick Navigation

User Menu