সুস্থ জীবনযাপন করতে হলে অবশ্যই আমাদের হৃদযন্ত্র বা হার্ট সুস্থ রাখা জরুরি। কারণ, মানব দেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো হার্ট। কিন্তু হার্ট কী? এটি কীভাবে কাজ করে? কেন এটি সুস্থ রাখা দরকার? যদি হার্ট সুস্থ না থাকে তবে কী হতে পারে? এসব প্রশ্ন অনেকের মনেই জাগে। আপনি যদি এই প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর চান, তাহলে এই নিবন্ধটি আপনার জন্য।
একজন সুস্থ ব্যক্তির হৃদয় গড়ে ২,৬০০ মিলিয়ন বার স্পন্দিত হয়। প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষের হৃদয়ের ওজন প্রায় ৩০০ গ্রাম। নারীদের হৃদযন্ত্র পুরুষদের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ কম গতিতে কাজ করে।
হার্টের মোট চারটি প্রকোষ্ঠ থাকে:
হার্ট একটি পাতলা পর্দা দ্বারা আবৃত, যা ‘পেরিকার্ডিয়াম’ নামে পরিচিত। হার্টের দেয়াল অজৈব পেশি দ্বারা গঠিত, যা কার্ডিয়াক মাসল নামে পরিচিত।
সুস্থ হৃদয়ই সুখী জীবনের চাবিকাঠি। নিয়ম মেনে জীবনযাপন করলে সহজেই হৃদরোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। মনে রাখবেন, প্রতিরোধই উত্তম চিকিৎসা!
হার্ট কী?
মানবদেহের রক্ত সংবহন ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো হার্ট। এটি এক ধরনের জীবন্ত পাম্প যা সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালন করে।একজন সুস্থ ব্যক্তির হৃদয় গড়ে ২,৬০০ মিলিয়ন বার স্পন্দিত হয়। প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষের হৃদয়ের ওজন প্রায় ৩০০ গ্রাম। নারীদের হৃদযন্ত্র পুরুষদের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ কম গতিতে কাজ করে।
হার্টের মোট চারটি প্রকোষ্ঠ থাকে:
- ডান অলিন্দ (Right Atrium)
- বাম অলিন্দ (Left Atrium)
- ডান নিলয় (Right Ventricle)
- বাম নিলয় (Left Ventricle)
হার্টবিট কী?
হার্টের সংকোচন (Systole) এবং প্রসারণ (Diastole) একসঙ্গে মিলে হার্টবিট বা হৃদস্পন্দন তৈরি করে। একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির হৃদস্পন্দনের হার প্রতি মিনিটে ৬০-৭০ বার হয়ে থাকে।হার্টের অবস্থান ও গঠন
মানব হৃদয় বুকের মাঝখানে, ডায়াফ্রামের ওপরে এবং ফুসফুসের মাঝামাঝি অংশে অবস্থিত। এটি প্রায় ৮০% অংশ বাম পাশে থাকে। হৃদয় লালচে-বাদামি বর্ণের এবং একটি ত্রিভুজাকৃতির গঠনের মতো দেখতে।হার্ট একটি পাতলা পর্দা দ্বারা আবৃত, যা ‘পেরিকার্ডিয়াম’ নামে পরিচিত। হার্টের দেয়াল অজৈব পেশি দ্বারা গঠিত, যা কার্ডিয়াক মাসল নামে পরিচিত।
হার্ট কীভাবে কাজ করে?
হার্টের চারটি প্রকোষ্ঠ রক্ত সংগ্রহ ও সরবরাহের জন্য দায়ী:- ডান অলিন্দ: শিরার মাধ্যমে কার্বন ডাই-অক্সাইডযুক্ত রক্ত সংগ্রহ করে।
- ডান নিলয়: এই রক্ত ফুসফুসে পাঠায়।
- বাম অলিন্দ: ফুসফুস থেকে বিশুদ্ধ অক্সিজেনযুক্ত রক্ত গ্রহণ করে।
- বাম নিলয়: বিশুদ্ধ রক্ত শরীরের বিভিন্ন অংশে পাঠায়।
হার্ট সুস্থ না থাকলে কী হতে পারে?
হার্ট যদি সুস্থ না থাকে তাহলে হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক, হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতা, এনজাইনা, রক্তচাপজনিত সমস্যা এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়তে পারে।যে খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
১. লিভার, মস্তিষ্ক, ও নাড়িভুঁড়ি
এগুলোর মধ্যে প্রচুর কোলেস্টেরল থাকে, যা হার্টের জন্য ক্ষতিকর।২. চিংড়ি
চিংড়িতে প্রচুর কোলেস্টেরল থাকে, যা হৃদরোগীদের জন্য ক্ষতিকর।৩. মাছের মাথা ও মাছের ডিম
এগুলোর মধ্যে উচ্চমাত্রার ট্রাইগ্লিসারাইড থাকে, যা রক্তের লিপিড প্রোফাইল বাড়িয়ে দেয়।৪. ফাস্টফুড
নিয়মিত ফাস্টফুড খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি ২০-৭০% পর্যন্ত বাড়তে পারে।৫. ডিমের কুসুম
ডিমের কুসুমে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল থাকে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।৬. ঘি, মাখন ও ডালডা
এগুলোর মধ্যে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা ধমনী বন্ধ করে দিতে পারে।৭. নারকেল তেল
নারকেল তেলে ৭৫-৯০% স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা হার্টের জন্য ক্ষতিকর।৮. অতিরিক্ত ভাজা খাবার
ভাজা খাবারে অতিরিক্ত তেল ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ায়।৯. লাল মাংস
লাল মাংসের মধ্যে ‘কার্নিটিন’ থাকে, যা ধমনী বন্ধ করার জন্য দায়ী।১০. চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার
অতিরিক্ত চিনি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি করে।হার্টের জন্য উপকারী খাবার
১. সবুজ চা
সবুজ চায়ে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।২. রসুন
প্রতিদিন রসুন খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।৩. ডার্ক চকলেট
ডার্ক চকলেট মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্র সতেজ রাখে এবং উচ্চ রক্তচাপ কমায়।৪. শাকসবজি ও সালাদ
এগুলোর মধ্যে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা হৃদরোগ প্রতিরোধ করে।৫. সামুদ্রিক মাছ
এগুলোর মধ্যে ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ থাকে, যা হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।৬. বাদাম
বাদাম স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে এবং হৃদরোগ প্রতিরোধ করে।৭. কালো কফি
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত কালো কফি হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষিত রাখে।৮. আদা
আদাতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হার্টের জন্য উপকারী।৯. ডিমের সাদা অংশ
এতে থাকা ওমেগা-৩ হার্টের জন্য ভালো। তবে সপ্তাহে ৪ দিনের বেশি না খাওয়াই উত্তম।১০. টক ফল
টক ফল যেমন আমলকি, লেবু, মাল্টা ইত্যাদি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।হৃদযন্ত্র বা হার্ট সুস্থ রাখার উপায়
✔ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করুন✔ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করুন✔ ধূমপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ করুন✔ ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন✔ নিয়মিত ব্যায়াম করুন✔ অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ এড়িয়ে চলুন✔ মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুনসুস্থ হৃদয়ই সুখী জীবনের চাবিকাঠি। নিয়ম মেনে জীবনযাপন করলে সহজেই হৃদরোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। মনে রাখবেন, প্রতিরোধই উত্তম চিকিৎসা!
Last edited: