চুল পড়া বা টাক পড়ার সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে আধুনিক ও কার্যকর পদ্ধতি হলো চুল প্রতিস্থাপন। বর্তমানে এই প্রযুক্তির জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। তবে অনেকেই এই অস্ত্রোপচার সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন না। চুল প্রতিস্থাপন কী? এটি কীভাবে করা হয়? এর কার্যকারিতা কতটুকু? কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি? আজকের এই নিবন্ধে চুল প্রতিস্থাপনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো আলোচনা করা হলো।
মাথার পেছনের অংশ এবং কানের দুই পাশের চুল স্থায়ী অঞ্চলে পড়ে। এই চুল সাধারণত জিনগত বা হরমোনজনিত কারণে পড়ে না। ফলে টাক পড়ার সমস্যা থাকলে মূলত সামনের চুলই পড়ে যায়।
টাক পড়া রোধ করতে, স্থায়ী অঞ্চল থেকে চুল সংগ্রহ করে অস্থায়ী অঞ্চলে প্রতিস্থাপন করা হয়। চুল সংগ্রহের এই স্থানকে বলা হয় ‘ডোনার এরিয়া’।
অস্ত্রোপচারের আগে রোগীর মাথায় স্থানীয় অবেদন (local anesthesia) দেওয়া হয়, যাতে ব্যথা অনুভূত না হয়। চুল প্রতিস্থাপন একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া, যা সাধারণত ৫-৬ ঘণ্টা সময় নেয়।
FUT পদ্ধতিটি তুলনামূলকভাবে জটিল এবং এতে ক্ষত শুকাতে ১০ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। কিছুটা ব্যথা ও দাগ থাকার সম্ভাবনা থাকে। তবে এতে মাথার চুল কামাতে হয় না।
এই পদ্ধতিতে কাটার প্রয়োজন হয় না, তবে এতে ট্রান্সসেকশন (Transsection) সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া ১০০টি চুল প্রতিস্থাপন করলে প্রায় ৩০টি টিকে থাকে, বাকি ৭০টি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই এই পদ্ধতিতে সফলতার হার তুলনামূলক কম।
DHI পদ্ধতিতে ১০০টি চুল প্রতিস্থাপন করলে ৯৭টি টিকে থাকে, যা অন্যান্য পদ্ধতির চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর। ভবিষ্যতে এই পদ্ধতিই সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হয়।
চুল প্রতিস্থাপনের জন্য বয়স বড় বিষয় নয়। ২৫ বছর বা ৬০ বছর, যেকোনো বয়সেই করা সম্ভব যদি ডোনার এরিয়া ভালো থাকে।
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগ থাকলেও যদি তা নিয়ন্ত্রণে থাকে, তবে সার্জারিতে কোনো সমস্যা হয় না।
যুক্তরাষ্ট্র: অনেক ক্লিনিকে প্রতি ফোলিকল ভিত্তিতে নয়, বরং সম্পূর্ণ পদ্ধতির জন্য ১২০০-১৪০০ ডলার চার্জ করা হয়।
উপসংহার
চুল প্রতিস্থাপন একটি নিরাপদ ও কার্যকর পদ্ধতি, যা আধুনিক চিকিৎসার অন্যতম সেরা আবিষ্কার। এটি টাক পড়ার স্থায়ী সমাধান দিতে সক্ষম, তাই যারা এই সমস্যায় ভুগছেন, তারা নির্ভয়ে এই পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন।
চুল প্রতিস্থাপন কী?
মানবদেহের অন্যান্য অংশের (যেমন কিডনি, চোখ) মতো এখন চুলও প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। তবে এই ক্ষেত্রে অন্য কারও চুল ব্যবহার করা হয় না। রোগীর নিজের মাথার এক অংশ থেকে চুল নিয়ে অন্য অংশে প্রতিস্থাপন করা হয়। এই পদ্ধতিই চুল প্রতিস্থাপন বা হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট নামে পরিচিত। সাধারণত মাথার চুলকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়:- অস্থায়ী অঞ্চল (Temporary Zone)
- স্থায়ী অঞ্চল (Permanent Zone)
মাথার পেছনের অংশ এবং কানের দুই পাশের চুল স্থায়ী অঞ্চলে পড়ে। এই চুল সাধারণত জিনগত বা হরমোনজনিত কারণে পড়ে না। ফলে টাক পড়ার সমস্যা থাকলে মূলত সামনের চুলই পড়ে যায়।
টাক পড়া রোধ করতে, স্থায়ী অঞ্চল থেকে চুল সংগ্রহ করে অস্থায়ী অঞ্চলে প্রতিস্থাপন করা হয়। চুল সংগ্রহের এই স্থানকে বলা হয় ‘ডোনার এরিয়া’।
চুল প্রতিস্থাপন কীভাবে করা হয়?
চুল প্রতিস্থাপন একটি সূক্ষ্ম অস্ত্রোপচার। এটি এককভাবে করা সম্ভব নয়, বরং প্রশিক্ষিত সার্জনদের একটি দলের প্রয়োজন হয়। এতে প্লাস্টিক সার্জন, ডার্মাটোলজিস্ট ও বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।অস্ত্রোপচারের আগে রোগীর মাথায় স্থানীয় অবেদন (local anesthesia) দেওয়া হয়, যাতে ব্যথা অনুভূত না হয়। চুল প্রতিস্থাপন একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া, যা সাধারণত ৫-৬ ঘণ্টা সময় নেয়।
চুল প্রতিস্থাপনের তিনটি পদ্ধতি:
- FUT (Follicular Unit Transplantation)
- FUE (Follicular Unit Extraction)
- DHI (Direct Hair Implantation)
১. FUT পদ্ধতি
এই পদ্ধতিতে মাথার পিছনের দিক থেকে অর্ধ ইঞ্চি চওড়া একটি চামড়ার টুকরো কাটা হয় এবং সেখান থেকে ফোলিকল (Follicle) আলাদা করা হয়। এরপর ইনজেকশনের মাধ্যমে সামনের দিকে প্রতিস্থাপন করা হয়। এই পদ্ধতিতে ৪ ঘণ্টায় ২০০০টি চুল প্রতিস্থাপন করা যায় এবং একজন সার্জন সর্বোচ্চ ৬০০০টি চুল প্রতিস্থাপন করতে পারেন।FUT পদ্ধতিটি তুলনামূলকভাবে জটিল এবং এতে ক্ষত শুকাতে ১০ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। কিছুটা ব্যথা ও দাগ থাকার সম্ভাবনা থাকে। তবে এতে মাথার চুল কামাতে হয় না।
২. FUE পদ্ধতি
FUE পদ্ধতিতে মাইক্রোমিটার ব্যবহার করা হয়, যার মাধ্যমে প্রতিটি চুল আলাদাভাবে ডোনার এরিয়া থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং মটরের সাহায্যে প্রতিস্থাপন করা হয়।এই পদ্ধতিতে কাটার প্রয়োজন হয় না, তবে এতে ট্রান্সসেকশন (Transsection) সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া ১০০টি চুল প্রতিস্থাপন করলে প্রায় ৩০টি টিকে থাকে, বাকি ৭০টি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই এই পদ্ধতিতে সফলতার হার তুলনামূলক কম।
৩. DHI পদ্ধতি
DHI হচ্ছে চুল প্রতিস্থাপনের সবচেয়ে আধুনিক ও কার্যকর পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে প্রতিটি চুল হাতে ধরে হ্যান্ড পাঞ্চ দিয়ে তোলা হয় এবং হাতে করে প্রতিস্থাপন করা হয়। এতে সময় বেশি লাগলেও ফলাফল অনেক ভালো।DHI পদ্ধতিতে ১০০টি চুল প্রতিস্থাপন করলে ৯৭টি টিকে থাকে, যা অন্যান্য পদ্ধতির চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর। ভবিষ্যতে এই পদ্ধতিই সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হয়।
কারা চুল প্রতিস্থাপন করাতে পারেন?
যারা জিনগত বা হরমোনজনিত কারণে ২৫-৩০ বছর বয়সের আগেই টাক পড়ে যাচ্ছেন, তাদের জন্য এটি কার্যকর। নারীদের ক্ষেত্রে মেনোপজের পর চুল পড়ার প্রবণতা বেশি থাকে। এছাড়া দুর্ঘটনার কারণে চুল হারানো ব্যক্তিরাও এই সার্জারি করাতে পারেন।চুল প্রতিস্থাপনের জন্য বয়স বড় বিষয় নয়। ২৫ বছর বা ৬০ বছর, যেকোনো বয়সেই করা সম্ভব যদি ডোনার এরিয়া ভালো থাকে।
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগ থাকলেও যদি তা নিয়ন্ত্রণে থাকে, তবে সার্জারিতে কোনো সমস্যা হয় না।
চুল প্রতিস্থাপনের খরচ
কানাডা: FUT পদ্ধতিতে প্রতি ফোলিকল ১-১.৫ কানাডিয়ান সেন্ট এবং FUE পদ্ধতিতে প্রতি ফোলিকল ৫০-৬০ টাকা।যুক্তরাষ্ট্র: অনেক ক্লিনিকে প্রতি ফোলিকল ভিত্তিতে নয়, বরং সম্পূর্ণ পদ্ধতির জন্য ১২০০-১৪০০ ডলার চার্জ করা হয়।
ফলাফল পেতে কত সময় লাগে?
প্রতিস্থাপিত চুল কিছুদিন পর পড়ে যায়, তবে ৪-৬ মাসের মধ্যে নতুন চুল গজাতে শুরু করে। সম্পূর্ণ ফলাফল পেতে ১ থেকে ১.৫ বছর সময় লাগে।চুল প্রতিস্থাপনের সুবিধা
- প্রাকৃতিক চেহারা ফিরে আসে।
- টেকসই ও স্থায়ী সমাধান, পরচুলার মতো নয়।
- কাটিং, শ্যাম্পু, কন্ডিশনিং, রিবন্ডিং, কার্লিং সব সম্ভব।
- নিয়মিত থেরাপি (PRP) বা চিকিৎসা দরকার নেই।
- ভ্রু, গোঁফ, দাড়িতেও প্রতিস্থাপন করা যায়।
চুল প্রতিস্থাপনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
সার্জারির পর ২-৩ দিন মাথা ভারী লাগতে পারে।যদি রোগীর উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তবে সমস্যা হতে পারে।তবে অভিজ্ঞ সার্জনের মাধ্যমে করা হলে প্রায় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে না।উপসংহার
চুল প্রতিস্থাপন একটি নিরাপদ ও কার্যকর পদ্ধতি, যা আধুনিক চিকিৎসার অন্যতম সেরা আবিষ্কার। এটি টাক পড়ার স্থায়ী সমাধান দিতে সক্ষম, তাই যারা এই সমস্যায় ভুগছেন, তারা নির্ভয়ে এই পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন।
Last edited: