রমজানে রোজা রেখে পূর্ণ উদ্যমে কাজ করার উপায়: ৪টি কার্যকরী পরামর্শ

অনেকে বলে থাকেন যে রমজানে রোজা রেখে পূর্ণ উদ্যমে কাজ করা সম্ভব নয়। কিন্তু আসলে এটি পুরোপুরি সঠিক নয়। কিছু নিয়ম মেনে চললে রোজা রেখেও সর্বোচ্চ কর্মদক্ষতা বজায় রাখা সম্ভব। প্রকৃতপক্ষে, আমরা রোজা রাখি, কিন্তু রোজার আসল উপকারিতা পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারি না। রমজানের আত্মিক উপকারিতার পাশাপাশি এর অনেক পার্থিব উপকারিতাও রয়েছে। মহান আল্লাহ আমাদের ইহকাল ও পরকালের কল্যাণের জন্য রমজান দান করেছেন।

রমজানে রোজা রেখে পূর্ণ উদ্যমে কাজ করার উপায়: ৪টি কার্যকরী পরামর্শ


যদি আমরা প্রকৃত সংযমের মাধ্যমে সঠিক নিয়ম মেনে রোজা রাখতে পারি, তবে শুধু আখেরাতের মুক্তিই নয়, এই দুনিয়াতেও আমরা উপকৃত হব। শারীরিক ও মানসিকভাবে উন্নতি করব। এবং কর্মক্ষমতাও কমার পরিবর্তে বাড়বে।

কিন্তু যদি রমজানে সঠিকভাবে রোজা না রাখা হয়, তবে ইফতারের পর খুব দুর্বলতা অনুভব হবে, দিনের বেলায় পানিশূন্যতা দেখা দেবে, দীর্ঘ সময় কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে কষ্ট হবে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে – যা প্রত্যেকটি কাজের দক্ষতায় বাধা সৃষ্টি করবে। তবে এই সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিছু কার্যকর টিপস অনুসরণ করা যেতে পারে।

যদি আপনি রোদে বাইরে কাজ করেন, তাহলে রোজা রেখে সর্বোচ্চ কর্মদক্ষতা বজায় রাখা কঠিন হতে পারে। তবে যদি অফিসিয়াল কাজ করেন, তাহলে অবশ্যই পূর্ণ উদ্যমে কাজ করা সম্ভব।

নিম্নলিখিত কিছু টিপস অনুসরণ করলে রোজা রেখে কাজের দক্ষতা বজায় রাখা সহজ হবে। মুসলিম বিশ্বের সুপরিচিত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের ভিত্তিতে এগুলো তৈরি করা হয়েছে। তবে এটি কোনো চিকিৎসা পরামর্শ নয়, বরং রোজা রেখেও শক্তিশালী থেকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য কিছু কার্যকর পরামর্শ।

চলুন, জেনে নেওয়া যাক কীভাবে রোজা রেখেও কাজের পূর্ণ কার্যক্ষমতা বজায় রাখা যায়।

১. খাবারের ব্যাপারে সচেতন থাকুন​

খাবারের ব্যাপারে সচেতন থাকুন


আমরা এটি সবসময় শুনি, কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ গুরুত্ব দেন না। আমাদের দেশে ইফতারের সাধারণ খাবার হলো ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, জিলাপি ইত্যাদি। এর সঙ্গে থাকে হালিম, চপ, মাংসের মতো ভারী খাবার। একসঙ্গে এসব খেলে শরীর ভারী লাগে এবং ক্লান্তি আসে। একদিন যদি এসব ঐতিহ্যবাহী খাবার খান এবং পরের দিন ফল, শরবত, চিঁড়া ইত্যাদি খান – তাহলে বুঝতে পারবেন যে ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো ইফতারের পর কী পরিমাণ দুর্বলতা তৈরি করে।

আবুধাবির বুর্জিল হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান আর্চনা বাজু বলেন, "দীর্ঘ সময় না খাওয়ার ফলে মিষ্টি, ফাস্ট ফুড, ভারী খাবার ও অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ইফতার শুরু করা উচিত দুই-তিনটি খেজুর দিয়ে।"

তিনি আরও বলেন, ইফতার হালকা খাবার দিয়ে শুরু করলে দীর্ঘ সময় পর পাকস্থলীর জন্য খাবার হজম করা সহজ হয়। অন্যথায়, শরীরে একসঙ্গে বেশি পরিমাণে চিনি ও প্রোটিন প্রবেশ করলে তা প্রক্রিয়াকরণ করা কঠিন হয়ে যায়। ফলে ইফতারের পর ক্লান্তি আসে, ঘাম হয় এবং কিছুই করতে ইচ্ছা করে না।

তাই ভারী খাবার ইফতারে না খেয়ে কিছু সময় পর খাওয়া উচিত।

সেহরি নিয়ম মেনে খেলে সারাদিন কর্মক্ষম থাকা সম্ভব। ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ানদের মতে, সেহরিতে দুধজাতীয় খাবার, প্রচুর ফল ও মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত – যা শরীরকে সারা দিন সুস্থ রাখবে। পাশাপাশি প্রচুর পানি পান করতে হবে।

অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার ও গরু-ছাগলের মাংস এড়িয়ে চলুন, কারণ এসব খাবার শরীর থেকে প্রচুর পানি শোষণ করে, যা দ্রুত পানিশূন্যতা তৈরি করে। ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই সাদা ভাত, ওটস বেশি পরিমাণে খেতে পারেন, যা শক্তি দেবে। ফল ও পানি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখবে। গরু/ছাগলের মাংসের পরিবর্তে হাঁস-মুরগির মাংস বা মাছ খাওয়া যেতে পারে।

আবুধাবির বিখ্যাত হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডা. জিশান খান বলেন, রমজানে ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এগুলো দ্রুত কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়, যা স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। ভাজা খাবারের পরিবর্তে সিদ্ধ, গ্রিলড বা বেকড খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

২. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন​

পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন


অনেকেই সেহরি খেয়ে একসঙ্গে ঘুমিয়ে পড়েন, যা শরীরের জন্য মোটেও ভালো নয়। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীর ও মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়।

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। সেহরি খেয়ে যদি ঘুমান এবং অফিস ৯-১০ টায় হয়, তাহলে অন্তত ১ ঘণ্টা আগে জেগে প্রস্তুতি নিতে হয়। ফলে ঘুম ৫ ঘণ্টার বেশি হয় না, যা কয়েক দিনের মধ্যে শরীরে ঘাটতি তৈরি করে।

তাই তারাবির পর অন্তত ২-৩ ঘণ্টা ঘুমান, এরপর তাহাজ্জুদ ও নফল আদায় করুন। সেহরির পর আরও ৪ ঘণ্টা ঘুমালে ঘুমের ঘাটতি পূরণ হবে এবং সারাদিন কর্মক্ষম থাকা সম্ভব হবে।

৩. বিরতি নিয়ে কাজ করুন​

বিরতি নিয়ে কাজ করুন


রোজা রেখে দীর্ঘ সময় একটানা কাজ করলে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায়। তাই আধা ঘণ্টা পরপর ৫ মিনিটের বিরতি নিন। এক জায়গায় বসে না থেকে একটু হাঁটাহাঁটি করুন বা জানালার ধারে দাঁড়ান।

আপনি ‘পোমোডোরো টেকনিক’ ব্যবহার করতে পারেন। প্রতি ১০০ মিনিটের কাজকে ৪ ভাগে ভাগ করুন। প্রতি ২৫ মিনিটের পর ৫ মিনিটের বিরতি নিন। চতুর্থ অংশের পর ১৫-২০ মিনিটের দীর্ঘ বিরতি নিন। এতে কাজের দক্ষতা বাড়বে।

৪. নিয়মিত নামাজ ও ইবাদত করুন​

নিয়মিত নামাজ ও ইবাদত করুন


রোজা শুধু না খাওয়ার নাম নয়। সঠিকভাবে নামাজ ও অন্যান্য ইবাদত করলে মনের শান্তি বজায় থাকে, যা কাজের দক্ষতা বাড়ায়। ইবাদত না করলে মনে অস্থিরতা কাজ করে এবং কাজের প্রতি মনোযোগ কমে যায়।

উপসংহার​

সারাদিন না খেয়ে থাকলে শরীর কিছুটা দুর্বল হতেই পারে। তবে সঠিক নিয়ম মেনে চললে রোজা রেখেও কর্মদক্ষতা বজায় রাখা সম্ভব। অনেকেই উপরের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে উপকার পাচ্ছেন, আপনিও চেষ্টা করে দেখতে পারেন। যদি উপকৃত হন, তাহলে অন্যদের সাথেও শেয়ার করুন।
 

About us

  • BanglaForums.com একটি বাংলা অনলাইন কমিউনিটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে ব্যক্তিরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে পারে, ধারণা ভাগ করে নিতে পারে এবং বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য ও প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে পারে।

Quick Navigation

User Menu